কোভিড মহামারীতে বিশ্বব্যাপী নারীরা চাকুরি হারিয়েছে, আয় কমে গেছে এবং একই সাথে বৈষম্য, শোষণ ও সহিংসতার স্বীকার হচ্ছে। বহি: বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিপুলসংখ্যক নারী লকডাউন ও সাটডাউনে দোকান, মার্কেট, সপিংমল, পর্যটনকেন্দ্র, উৎপাদন ও সেবাখাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকুরিচ্যুত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতে থেকে উত্তরণ, কর্মজীবি নারী, নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তা এবং নারীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহকে একসাথে কাজ করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট লন্ডনের আয়োজনে “ভার্চুয়াল মিটিং অব কমনওয়েলথ মিনিস্টারস ফর উইমেন’স এ্যাফেয়ার্স এন্ড জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফ কোভিড-১৯” বিষয়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের উইমেন’স এ্যাফেয়ার্স মন্ত্রীদের সাথে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন। ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন কমনওয়েলথ উইমেন’স এ্যাফেয়ার্স চেয়ারম্যান ও কেনিয়ার পাবলিক সার্ভিস, ইয়ুথ ও জেন্ডার বিষয়ক মন্ত্রী প্রফেসর মার্গারেট কবিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটেলি ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি।
প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, এবছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংকটে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছেন আগামী তিন বছর বাংলাদেশে কেউ না খেয়ে থাকবেনা। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। স্থবির হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ কোটি টাকার বেশী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যা মধ্যথেকে নারী উদ্যোক্তা ও ব্যাবসায়ীরা সুবিধা পাবে। এছাড়া বিনামূল্যেখাদ্য বিতরণ, নগদ অর্থ বিতরণ, গৃহ নির্মান ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রণোদনা প্যাকেজ যার বেশীরভাগ উপকারভোগী নারী।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ৮০ ভাগ নারী যারা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্য দিয়ে করোনাকালে সম্মুখসারীর যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমান প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে ফিরে এসেছে যারফলে তাদের পরিবারের নারী ও শিশু খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও আম্পান ও বন্যায় প্রায় ৬ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুর আছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় করোনা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে নারীদের আর্থিক, টেকনিক্যাল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। সরকার ২০ লাখ নারীকে ভিজিডি, মাতৃত্বকালীন ও কর্মজীবী ল্যাক্টেটিং মা ভাতা প্রদান করছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধকল্পে অন লাইন প্লাটফরম ‘উত্তরণ’ উদ্বোধন।
ভার্চুয়াল সভায় কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বলেন কমনওয়েলথভুক্ত দেশের নারীদের নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও জেন্ডার ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সবাইকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে।
সভায় জানান হয় কোভিড মহামারীতে নারীর মৃত্যু কম হলেও নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির প্রভাব অনেক বেশি। নারীরা এই মহামারীতে সম্মুখসারির যোদ্ধা ভূমিকায় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবক, বিজ্ঞানী, কেয়ারগিভার,উপার্জনকারী হিসেবে মহামারী মোকাবেলায় ও পরিবারের জীবিকা অর্জনে ভূমিকা রাখছে। তবে এই সময়ে নারীরা সহিংসতারও স্বীকার হচ্ছে। কোভিড মহামারীর কারনে বিশ্বব্যাপি ছোট ও মাঝারী আকারের নারীরা উদ্যোক্তরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রব্যের চাহিদা কমে গেছে যা তাদের জীবন ও জীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সভায় সাউথ আফ্রিকার ইয়ুথ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী Mate Nkoana Mashabane, মালদ্বীপের জেন্ডার, পরিবার ও সমাজসেবা মন্ত্রী Aishath Mohamed Didi, সামোয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী Fiame Naomi Mata’afa, কানাডার জেন্ডার ও ইক্যুয়ালিটি বিভাগের পরিচালক Natalie Lawrence ও বাহামার জেন্ডার ও পরিবার বিষয়ক বিভাগের পরিচালক Dr. Jacinta Higgs বক্তব্য করেন। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ক্যামেরুন, কেনিয়া এবং সিসেলশ, রুয়ান্ডা,গায়ানা বাহামা মহিলা ও জেন্ডার বিষয় মন্ত্রী বক্তব্য করেন।